বেনাপোল সীমান্তে দুই বাংলার মিলন মেলা
জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই বাংলার মানুষ একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান। নেতারা হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলাকে।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে শুক্রবার বসেছিল দুই বাংলার মিলনমেলা। সবার মুখে একই কথা- ‘একই আকাশ একই বাতাস, দু’ বাংলার মানুষের ভাষা এক’।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ এই শ্লোগান নিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় মাথানত করতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও।
সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার মানুষ, রাজনৈতিক ,সামাজিক, ব্যবসায়ীক ও সংস্কৃতিক দল এবং সরকারের প্রতিনিধিরাও। দু দেশের বেনাপোল ও বনগাঁও পৌরসভা এই মিলন মেলার আয়োজন করেন।
নোমান্সল্যান্ডে নির্র্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল ৮টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বাংলাদেশের জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের প্রতি মন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। সঙ্গে ছিলেন পশ্চিম বংগের বনগাঁও অঞ্চলের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বনগাঁও পৌর সভার মেয়র জোৎসনা আড্র, উওর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাপতি রহিমা খাতুন ও ভাইস চেয়ারম্যান গোপাল ব্যানার্জি।
বাংলাদেশের বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, ২৬ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে: কর্নেল জাহাংগীর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম শরিফুল আলম, উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সত্বঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে।
তারা জানালেন, ‘আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালি বাংলাভাষী মানুষের পাশে।’ নেতাদের কণ্ঠে ছিল ভবিষ্যতে আরো বড় করে এক মঞ্চে একুশ উদযাপনের প্রত্যাশা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যৌথ ভাবে দু দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও দিবসটি পালন করলো দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় সহ নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্নিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। ভাষার টানে বাঙালির বাধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে যান তারা।
দু’দেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপওা বেস্টনি পেরিয়ে ভাষা প্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপলুত হয়ে পড়ে। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে উভয়কে বরণ করে নেয়া
দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ।
বেনাপোল – পেট্রাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।
ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচছা জানায়। এরপর দু’দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে।
এ সময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধনহারা আবেগের কাছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। এর মধ্যদিয়ে বোঝা গেল রফিক, শফিক, বরকত ও সালামের তরতাজা রক্ত বৃথা যায়নি। ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আবেক ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়ে দিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।
সমগ্র অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে।
সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ কাঁটাতারের বেষ্টনী দিয়ে কঠোর নিরাপওা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। দুই বাংলার নামী দামি শিল্পীদের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী আ. জব্বার আবৃতিকার ভাস্কর বন্ধোপাধ্যায় ২১ এর সংগীত পরিবেশন ও আবৃতি করেন। কবি মাহবুব আজিজও কবিতা আবৃতি করেন।
প্রতিক্ষণ /এডি/লতিফ